শিক্ষাঙ্গন

গণমাধ্যম ও শিক্ষকদের উপেক্ষা করে বিরামপুরে নামমাত্র শিক্ষক দিবস উদযাপন

প্রিন্ট
গণমাধ্যম ও শিক্ষকদের উপেক্ষা করে বিরামপুরে নামমাত্র শিক্ষক দিবস উদযাপন

ছবি : স্বল্প সংখ্যক শিক্ষকদের অংশগ্রহণ


প্রকাশিত : ৬ অক্টোবর ২০২৫, ভোর ৪:২০

“শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি (Recasting Teaching as a Collaborative Profession)” এমন সহযোগিতার বার্তা নিয়েই সারাদেশে উৎসবমুখরভাবে পালিত হয়েছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫। কিন্তু দিনাজপুরের বিরামপুরে দিবসটির চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন, সীমিত আয়োজন, অল্প সংখ্যক অংশগ্রহণ, আর স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি অস্বাভাবিক নীরবতা।

রোববার (৫ অক্টোবর) সকালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ গেট থেকে একটি সংক্ষিপ্ত র‍্যালি বের হয়ে অডিটোরিয়ামে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনীম আওন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমশের আলী মণ্ডল, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুনা লায়লা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এনামুল হক চৌধুরী, এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, ভবানীপুর মাদ্রাসার সুপার, রামকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, এবং বিরামপুর উপজেলা কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামসহ বিরামপুর বিএম কলেজের অধ্যক্ষসহ অনেকে।

তবে যেখানে উপজেলায় ২ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের উপস্থিতির কথা ছিল, সেখানে অল্পসংখ্যক শিক্ষককেই দেখা গেছে। অনেক চেয়ার ফাঁকা থাকায় অনুষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

স্থানীয় সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় দিবস বা সরকারি কর্মসূচিতে সংবাদকর্মীদের সাধারণত আমন্ত্রণ জানানো হলেও, এবার কোনো সাংবাদিক বা সাংবাদিক সংগঠনকেই অনুষ্ঠানের খবর জানানো হয়নি।

একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, তড়িঘড়ি করে নামমাত্র অনুষ্ঠান করে দিবসের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে দূরে রেখে আয়োজন করাও রহস্যজনক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, স্থানীয়ভাবে একাধিক শিক্ষক সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে এবারের অনুষ্ঠান কার্যত নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। তাদের ভাষায়, যে দিবসের প্রতিপাদ্যই সহযোগিতা ও ঐক্যের কথা বলে, সে দিবসেই শিক্ষক সমাজ বিভক্ত এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।

দলনিরপেক্ষ শিক্ষকদের মতে, শিক্ষক সমাজে দলীয় প্রভাব ও বিভাজন দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় প্রকৃত শিক্ষা উদ্যোগ প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হচ্ছে।তারা বলেন, শিক্ষকতা মহান পেশা। তাই রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে শিক্ষক সমাজের ঐক্য ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনীম আওন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঐক্য ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিটিতে যেন যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের নির্বাচিত করা যায় সে বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমশের আলী মণ্ডল বলেন, শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে যেন সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল জানান, বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য যেমন সহযোগিতা, ঐক্য ও অংশগ্রহণের বার্তা দেয় বিরামপুরে তার প্রতিফলন ছিল উল্টো।শিক্ষক ও গণমাধ্যমকে উপেক্ষা করে নামমাত্র আয়োজনে দিবস পালন করা ‘সহযোগিতার পেশা’ ধারণার পরিপন্থী। স্থানীয় শিক্ষক মহলের মন্তব্য, দিবসটি যদি সত্যিই ‘সহযোগিতার দীপ্তি’র প্রতিফলন হতো, তবে আমন্ত্রণ থেকে অংশগ্রহণ সব ক্ষেত্রেই সমন্বয় থাকত।