ছবি : বালিয়াডাঙ্গীতে শিলাবৃষ্টিতে ৫ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজের ক্ষতি।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে শনিবার দিবাগত রাতে ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়েছে প্রায় ৩৬০ বিঘা জমির পেঁয়াজ বীজের খেত। এতে করে দুই শতাধিক কৃষকের আনুমানিক ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে না এলে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কৃষকদের ভাষ্যমতে, শনিবার রাত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে আকস্মিক দমকা হাওয়ার পর শুরু হয় বৃষ্টি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নামে শিলাবৃষ্টি। এতে পেঁয়াজ গাছে থাকা বীজের ফুল ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়। নিচু জমিগুলোতে পানি জমে গেছে, ফলে বীজ পচে যাওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
চাড়োল গ্রামের কৃষক বাবলুর রহমান ও ইউপি সদস্য সুলতান আলীর ১০ বিঘা জমির পেঁয়াজ বীজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাবলুর রহমান জানান, আশপাশের এলাকায় শুধুই বৃষ্টি হলেও মূল শিলাবৃষ্টি হয়েছে চাড়োল ও পতিলাভাষা গ্রামে—যেখানে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ বীজ চাষ হয়।
রবিবার দুপুরে সরেজমিনে মধ্য চাড়োল ও পূর্ব পতিলাভাষা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নিচু জমিগুলোতে পানি জমে আছে। অনেক ক্ষেতেই পেঁয়াজ ফুলের ডাটা মাটিতে পড়ে গেছে। কৃষকেরা ফুলগুলো সংগ্রহ করে নিচ্ছেন।
মধ্য চাড়োল গ্রামের কৃষক রাজিউর রহমান রাজু বলেন, ‘৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বীজ লাগাইছিলাম। ৩০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতেই সব শেষ। ভাবছিলাম বীজ বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিবো, এখন ঋণ কেমনে পরিশোধ করবো, এই চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে।’
কৃষকেরা জানান, ক্ষেত লাগানো থেকে শুরু করে পরিচর্যা—সবকিছু শেষ হয়েছিল। ১০ দিনের মধ্যে বীজ ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। প্রায় ৬০ শতাংশ বীজ ইতোমধ্যে পরিপক্ব হলেও বাকি ৪০ শতাংশ শীঘ্রই পাকতো।
পতিলাভাষা গ্রামের আসাদুর রহমান জানান, ‘আমার ভাই মিলে ৩ বিঘা জমিতে চাষ করছিলাম। আশা ছিল ৯০০ কেজি বীজ পাবো। এখন মনে হচ্ছে অর্ধেকও পাব না। আবহাওয়া যদি না ঠিক হয়, ক্ষতি আরও বাড়বে।’
রবিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গীসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে থেমে থেমে বৃষ্টি চলছিল। অনেক এলাকায় গাছ ও বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল জানান, ‘জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ৫০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঠে আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার দেবনাথ জানান, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে পরিপক্ব বীজ দ্রুত ঘরে তুলতে কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
মতামত