অর্থনীতি

আগামীর পৃথিবী: বিশ্বযুদ্ধ না বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ?

প্রিন্ট
আগামীর পৃথিবী: বিশ্বযুদ্ধ না বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ?

প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০২৫, দুপুর ১২:৪০ আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৫, দুপুর ১২:৪৫

পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধের দুটি প্রধান রূপ দেখা যায়—সরাসরি সামরিক সংঘাত (বিশ্বযুদ্ধ) এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা (বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ)। ২০তম শতকের দুটি বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল, আর ২১তম শতকের বিশ্ব অর্থনীতি মূলত বাণিজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তথ্যভিত্তিক ভিন্নধর্মী উদাহরণ: চিপস ও আধুনিক বিশ্বযুদ্ধ:

বিশ্বযুদ্ধের প্রচলিত ধারণা হলো সামরিক যুদ্ধ, কিন্তু আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তিই নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক সেমিকন্ডাক্টর চিপস যুদ্ধ, যা মূলত চীন, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান ও ইউরোপের মধ্যে এক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা।

১. চিপস: আধুনিক অস্ত্রের সমতুল্য:

স্মার্টফোন, কম্পিউটার, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মহাকাশ গবেষণার মূল ভিত্তি হলো সেমিকন্ডাক্টর চিপস। তাইওয়ান বিশ্বের ৬০% এরও বেশি চিপস উৎপাদন করে, এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

২. চীন-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত: বাণিজ্য যুদ্ধের চেহারা

যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে Huawei-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, কারণ এটি মার্কিন চিপসের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এরপর ২০২২ সালে চিপস অ্যান্ড সায়েন্স অ্যাক্ট পাস করে যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রযুক্তি প্রবৃদ্ধিকে সীমিত করার চেষ্টা করে। চীন পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিরল খনিজের (Rare Earth Elements) সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে, যা আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য।

৩. ভবিষ্যতের যুদ্ধ: কারখানার ময়দান বনাম রণক্ষেত্র:

আগামী বিশ্বযুদ্ধ কি আগের মতো ট্যাংক-বিমান-পরমাণু অস্ত্র নিয়ে হবে, নাকি প্রযুক্তি ও অর্থনীতির আধিপত্যের লড়াইয়ে রূপ নেবে?

প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ: যার কাছে উন্নত চিপস তৈরির ক্ষমতা থাকবে, সে-ই ভবিষ্যৎ যুদ্ধের শাসক হবে।

অর্থনৈতিক বলয়: দেশগুলো সরাসরি সংঘর্ষে না গিয়ে নিষেধাজ্ঞা, শুল্কনীতি ও প্রযুক্তিগত অবরোধ ব্যবহার করবে।

সাইবার ও এআই যুদ্ধ: সামরিক যুদ্ধের পরিবর্তে সাইবার হামলা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তথ্য নিয়ন্ত্রণ ও ডিজিটাল আগ্রাসনই হবে আধুনিক যুদ্ধের রূপ।

পরিশেষে: কোন পথে পৃথিবী?

আগামী পৃথিবীতে বিশ্বযুদ্ধের ধারণা বদলাচ্ছে। শারীরিক যুদ্ধের চেয়ে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত যুদ্ধ বড়ো ভূমিকা রাখবে। তাইওয়ানের মতো একটি ছোট দ্বীপ যদি বিশ্বের অর্থনীতিকে কাঁপিয়ে দিতে পারে, তবে বোঝা যায়—আগামীর বিশ্বযুদ্ধ সীমানার নয়, প্রযুক্তির হবে।

সুতরাং, যুদ্ধের অস্ত্র হবে চিপস, ডেটা, সাইবার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রভাব, যেখানে সামরিক আগ্রাসনের বদলে বাণিজ্য প্রতিযোগিতাই নির্ধারণ করবে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ।