শিক্ষা

গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবদান

প্রিন্ট
গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবদান

ছবি : মনির হোসেন শিক্ষক বাংলা বিভাগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর


প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ৯:৪১ আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ৯:৪২

দেশে ১১০ এরও বেশি বেসরকারি  বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বাংলাদেশে বেসরকারিখাতে উচ্চশিক্ষার কার্যক্রম চলমান। ব্যক্তি মালিকানা ও মুনাফা অভিমুখী শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হওয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পার্থক্য যোজন-বিয়োজন মাত্রায়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপক সংকট থাকা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ, স্বায়ত্তশাসন যেমন অনুপস্থিত তেমনই অভাব ভালো মানের শিক্ষক ও গবেষকের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কথা চলে- "ভালো শিক্ষকরা কয়েকদিনের জন্য ভ্রমণে আসেন। তারপর চলে যান" তবে

নামেমাত্র চার/পাঁচটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলো একই পর্যায়ের। অথচ হওয়ার কথা ছিল ভিন্ন। হয়নি। হয়নি এই কারণেই যে, ক্ষমতাসীন দল ও ক্ষমতাহীন দলের লোকেরাই এসবের মালিক। ডিন থেকে চেয়ারম্যান হয় সিলেকশন পদ্ধতিতে, ইলেকশনে নয়। আর যিনি একবার এসব পদে আসেন আমৃত্যু থেকে যেতে চান; যদি না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি না হয়৷ যার দরুন এরাও হয়ে ওঠেন ফ্যাসীবাদী। ভিন্ন মতের শিক্ষকদের দমন-পীড়ন, হয়রানি, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি দিবালোকের মতো সত্য হয়ে দাঁড়ায়। যার প্রভাব জুলাই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। 


তাছাড়া বাংলাদেশে ‘রাজনীতি, দল ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ ‘শিকার-শিকারি’ পর্যায়ে আবর্তিত। ফলপ্রসূত, রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন দল আরেক দলের উপর চালায় নির্মম উৎপীড়ন ও নিপীড়ন। ক্ষমতা থেকে ছিটকে যাবার ভয়ে অতীতের ন্যায় রাজনীতিবিদরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর ভর করে। কারণ বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে ছাত্র রাজনীতি ভূমিকা অত্যধিক। ফলে এরকম পূর্বের একটা আতংক জায়গা থেকে আমাদের ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ এবং শিক্ষকদের মধ্যে পরোক্ষ বলয় রাখতে সদা তৎপর। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ। তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামো, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব, মানসম্মত আবাসনের অভাব ছাড়াও বিশেষ করে শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি সবচেয়ে প্রবল। ফলে পার্থক্যের মাত্রা নানাবিধ দিক থেকে স্পষ্ট থাকায় তারা গণআন্দোলন ও গণ-আকাঙ্ক্ষার বৈপরীতমুখী। পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত বলা চলে। নিয়ন্ত্রিত কারণ; যিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের কড়া নিয়মনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে হয়। পক্ষান্তরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেহেতু ব্যক্তি মালিকানাধীন; ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান তিনিও কোনো না কোনোভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলায় সরকারবিরোধী মন্তব্য, অংশগ্রহণ যাতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিকূলে না যায় সেই দিক থেকে তিনি সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন। মূলত ব্যবসায়িক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিপদসংকুল পরিস্থিতি, ঝুঁকিহ্রাস ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীন দলের খড়গকৃপার আগাম বিপদ মোকাবিলা করার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা তার প্রতিষ্ঠানের উক্ত বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ থাকতে বাধ্য হোন। এতকিছু সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের পরও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে (১৭ জুলাই-আগস্ট ৪, ২০২৪) বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্পকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকরা ছাত্রদের ন্যায্য আন্দোলন প্রাতিষ্ঠানিক বাঁধা অতিক্রম করে সংহতি সমাবেশে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে প্রকাশ্যে মানববন্ধন করেছে। সর্বপ্রথম দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা (৩০ জুলাই)। এর দুদিন পর ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২৬ শিক্ষক শিক্ষক; রাজধানীর বাইরে খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ১২৪ জন শিক্ষক জন শিক্ষক, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউল্যাবের অল্পসংখ্যক শিক্ষক সংহতি সমাবেশে বিচার চেয়ে প্রকাশ্যে মানববন্ধন করেছে। এর বাইরে দেশের আর কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপস্থিত লক্ষ্য করা যায়নি। তবে একথা অনস্বীকার্য যে- ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ এর ব্যানারে সংঘবদ্ধ দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রথম থেকেই এ আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ও নানানভাবে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।


মনির হোসেন 

শিক্ষক

বাংলা বিভাগ 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর