ছবি : লেখক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৬৯, ৯০'র সালের সামাজিক ও সাংস্কৃতিকগত ঘটনাবলি যে পরিসরে গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমি তৈরি করেছিল। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো তারই নামান্তর। একথা অনস্বীকার্য যে, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বাইরে; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, সংঘবদ্ধ আন্দোলনে নিহত ও আহত অত্যধিক।
বাংলাদেশে ১৯৯৭-২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা প্রজন্মকে আখ্যায়িত করা হয়েছে জেন-জি জেনারেশন নামে। এই জেনারেশনের শিক্ষার্থীরাই ছিল মূল সংগঠক ও আন্দোলনকারী। যাদের একটা অংশ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে অধ্যয়নরত এবং উচ্চশিক্ষা শেষে বৃহৎ অংশ বেকার। প্রাপ্ত বয়স থেকে তারা দেশে আওয়ামী লীগের ভোটার বিহীন নির্বাচন, ইতিহাসকে একক ব্যক্তি-দলের আদলে ইতিহাসিকীকরণ; আয়নাঘর, দমন-পীড়ন, হত্যা-গুম, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, ঋণনির্ভর বাজেট, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, বে-হিসাবি উন্নয়ন প্রকল্প, তীব্র বেকারত্ব; রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রশাসন, আমলা, দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ নির্ভরশীলতা, সংখ্যালঘু নামে হিন্দুত্বপ্রীতি, ভারতপ্রীতি; এবং বাংলাদেশে বুর্জোয়া রাজনৈতিক চরিত্রের আওয়ামী-বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টির ভোট নিংড়ানোর রাজনীতি প্রভৃতি সবমিলিয়ে জেন-জি ছিল রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভান্বিত ও গোটা ব্যবস্থার প্রতি অপরাগ। আর এসব বিষয়গুলো মানসিকভাবে জেন-জি কে আন্দোলনমুখী করে তুলেছে। যা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের’ এক যুগান্তকারী ঘটনা।
২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা : পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য যাচাই-বাছাই, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার এবং সরেজমিন প্রাপ্ত তথ্যের পর্যালোচনার ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার স্পষ্ট পরিসংখ্যান পরিচয়সহকারে তুলে ধরা হলো।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-আবু সাঈদ[শিক্ষার্থী ইংরেজি বিভাগ, দেশের ১ম শহিদ], রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-জহিরুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-আহসান হাবিব তামিম, একরামুল হক সাজিদ; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়-কাইয়ুম; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-হৃদয় চন্দ, রাসেল; শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়-রুদ্র সেন; বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়-নাইমুর রহমান।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : ‘নর্দান ইউনিভার্সিটি একজন (আসিফ হাসান-ইংরেজি বিভাগ; বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২য় শহিদ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম); বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি [বিইউবিটি] ৩ জন- (তাহমিদ আবদুল্লাহ অয়ন-সিএসই, সুজন মাহমুদ মিথি-ইইই বিভাগ, আহসানুল দীপ্ত- সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্ট); সাউথইস্ট ৪ জন (কামরুল হাসান রাব্বি-ইইই ডিপার্টমেন্ট, রাকিব হাসান-টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্ট, ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির-বিবিএ, রবিউল ইসলামণ্ডটেক্সটাইল ডিপার্টমেন্ট); বিইউপি দুইজন (মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ- খুবি থেকে গণিতে স্নাতক এবং মৃত্যুর সময় বিইউপিতে এমবিএ অধ্যয়নরত ছিলেন, জোবায়ের ওমর খান-আইন বিভাগ); নর্থ সাউথ ১ জন (আবদুল্লাহ আল আবির- এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন); সিটি ইউনিভার্সিটি দুইজন (মো. সাজ্জাদ হোসেন সজল- টেক্সটাইল বিভাগ, আহনাফ আবির-ইইই ডিপার্টমেন্ট); ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি দুইজন (তৌফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া-ইইই বিভাগ, নয়ন শেখণ্ডআইন বিভাগ); গাজীপুর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি একজন (জাহিদুজ্জামান তানভীন-মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগ); মানারাত ইউনিভার্সিটি: দুজন (শাকিল পারভেজ-বিবিএ, আশরাফুল্লাহ-ইইই বিভাগ); ড্যাফোডিল দুজন (শাহরিয়ার আল আফরোজ শ্রাবণ, রমিজউদ্দিন আহমেদ রূপ); সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি দুজন (রাসেল মাহমুদণ্ডবাংলা বিভাগ, সাজ্জাদ হোসেন-অ্যাপারেল মার্চেন্টাইজিং ডিপার্টমেন্ট); ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ একজন (জুলফিকার আহমেদ শাকিল- চারুকলা বিভাগ); ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল এজন (মোহাম্মদ ইরফান ভূঁইয়া-সিএসই); ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি একজন (শাহনেওয়াজ ফাহাদ); পাঠশালা সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট: একজন (তাহির জামান প্রিয়); নিকুঞ্জ ক্রাউন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস টেকনোলজি একজন (আকরাম খান রাব্বি); বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশান অ্যান্ড টেকনোলজি একজন (মো. সেলিম তালুকদার-অ্যাপারেল মার্চেন্টাইজিং ডিপার্টমেন্ট); মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি দুজন (শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন- সিএসই ডিপার্টমেন্ট, মো. রাকিবুল হোসেন-মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগ); সিসিএন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি : ১ জন (হামিদুর রহমান-পুরপ্রকৌশল বিভাগ); ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি একজন (আসিফ ইকবাল); বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী একজন (সাকিব আনজুমণ্ডসিএসই ডিপার্টমেন্ট ); প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম একজন (ফয়সাল আহমেদ শান্ত); বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম একজন (কাউসার মাহমুদ); বাংলাদেশ অব গ্লাস অ্যা- সিরামিক একজন (আবদুল্লাহ আল তাহির); তাছাড়া দেশে অবস্থানরত মালয়েশিয়া টিংকু আবদুল রহমান ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজির একজন (শ্রাবণ গাজী-সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার), প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি একজন (আহনাফ শরীফ-মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ) ও অজ্ঞাতনামা দুজন।
বর্ণিত তথ্য বিশ্লেষণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ জন। পক্ষান্তরে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ জন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ‘রাজনৈতিক ইতিহাসে’ নিহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংখ্যার দিকে সবচেয়ে বেশি। আহত ও গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অগণিত।
মনির হোসেন
শিক্ষক
বাংলা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর
মতামত