বীরগঞ্জ

বীরগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুপের অস্তিত্ব

প্রিন্ট
বীরগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুপের অস্তিত্ব

প্রকাশিত : ৯ অক্টোবর ২০২৫, সন্ধ্যা ৭:১৪


দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ জনপদে একসময় পানি সংগ্রহের প্রধান উৎস ছিল কুপ/ইন্দ্রিরা/কুয়া। কালের বিবর্তন আর আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আজ সেই কুপ হারিয়ে গেছে বলা যায়। 


বাপ দাদাদের সময়ে গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অংশ এই কুপ আজ ইতিহাস ইতিহাসের পাতায়।

এক সময় প্রায় প্রতিটি গ্রামে, এমনকি শহরাঞ্চলেও দেখা যেত কুপ। গৃহস্থ বাড়ির উঠোনে কিংবা গ্রামের মাঝখানে কুপ খনন করা হতো বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের জন্য। এ পানি রান্না, খাওয়া, গোসল এমনকি কৃষিকাজেও ব্যবহৃত হতো। 

গ্রামীণ নারীরা সকালে কিংবা বিকেলে কুপ থেকে পানি তোলার পাশাপাশি আড্ডায় মেতে উঠতেন। গ্রামের সামাজিক যোগাযোগ ও আন্তরিকতার এক বড় ক্ষেত্রও ছিল এই কুপকে ঘিরে।

কিন্তু বর্তমানে টিউবওয়েল, ডীপ টিউবওয়েল ও মোটরচালিত পানির সহজ লভ্যতায় কুপ ব্যবহার প্রায় বিলুপ্ত। নতুন প্রজন্মের অনেকেই কুপের নাম শুনলেও বাস্তবে দেখার সুযোগ পায়নি।

শহরের আশপাশ এবং প্রত্যন্ত গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ৪ নং পাল্টাপুর ইউনিয়নের কাজল গ্রামে হারিয়ে যাওয়া কূপ দেখতে পাওয়া যায়, বহু কুপ ভরাট করে ফেলা হয়েছে কিংবা অবহেলায় ভেঙে পড়েছে। কিছু কুপ এখনো আছে বটে, তবে সেগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয় প্রবীণ মো মফির উদ্দিন (৭৩) প্রতিনিধিকে জানান, কুপ একসময় ছিল জীবনের অংশ। পুকুর কিংবা নদী-নালা দূষিত হলে কুপের পানিই ছিল ভরসা। কুপকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ সংস্কৃতিরও বিকাশ ঘটেছিল। বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে কুপের পানি ব্যবহৃত হতো ।

মানবিক বীরগঞ্জ এর পক্ষে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি কুপ সংরক্ষণ করলে পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব। স্থানীয় সরকার বা সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থাগুলোর উদ্যোগে গ্রামগুলোতে কয়েকটি কুপ সংরক্ষণ করলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঐতিহ্য ও ইতিহাসের নিদর্শন হয়ে থাকবে।

উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের কাজল গ্রামের প্রবীণ মহিলা হামিদা বেগম(৬৮) বলেন, “ছোটবেলায় আমরা কুপ থেকেই পানি খেতাম। এখন আর কোথাও কুপ চোখে পড়ে না। এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে দেখে মন খারাপ হয়।”

বীরগঞ্জ মহিলা কলেজর অধ্যাপক মো: এনামুল হক জানান, বীরগঞ্জের কুপ কেবল পানির উৎস নয়, এটি ছিল গ্রামীণ সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। কালের পরিবর্তনে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রয়োজন সচেতনতা ও সংরক্ষণের উদ্যোগ। নাহলে কয়েক বছরের মধ্যেই কুপ কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। মানুষ আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলেও, হারিয়ে যাচ্ছে তাদের এক মূল্যবান ঐতিহ্যবাহী কুপ। যা সংরক্ষণের দায়িত্ব এখন সমাজ ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নেওয়া জরুরি।