সারাদেশ

হাকিমপুর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসকে মারধরের অভিযোগে পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়কের সকল পদ স্থগিত

প্রিন্ট
হাকিমপুর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসকে মারধরের অভিযোগে পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়কের সকল পদ স্থগিত

ছবি : হাকিমপুর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসকে মারধরের অভিযোগে পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়কের সকল পদ স্থগিত


প্রকাশিত : ১ আগস্ট ২০২৫, সন্ধ্যা ৬:০৫


দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মশিউর রহমানকে মারধর সহ মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন এর বিরুদ্ধে। ঘটনার পরে ওই দিন রাতেই জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির পক্ষ থেকে অভিযুক্ত আল মামুনের সকল সদস্য পদ স্থগিত করে পত্র প্রেরণ করা হয়। তবে তাৎক্ষণিক বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক বলছেন উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি।

অন্য দিকে এবিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। আর পুলিশ বলছে অভিযোগ পেলেই তার ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার মশিউর রহমানের উপর হামলা চালায় পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মামুন সহ ১০ থেকে ১২জনের একটি দল। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হাসপাতালের সকল চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা দেড় ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করছেন। সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও এখন পর্যন্ত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

হাসপাতালের কেবিনে বাবাকে নিয়ে ভর্তি থাকা ফাইম বাকবু বলেন, আমার বাবাকে ডাক্তার দেখার পরে পাশে রুমে গেলে রোগীর লোকের সাথে চেচামেচি শুনতে পাই। গিয়ে দেখি ডাক্তার বলতিছে আপনি তো সুস্থ রিলিজ নিয়ে বাসায় যান। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আছেন। প্রয়োজন হলে পরে আবার ভর্তি হবেন। এসব বিষয়ে একটু বাকবিতন্ডা হচ্ছিল। আমি নিচে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসে শুনি ওনারা ডাক্তারকে মারধর করেছেন। বিষয়টা খুবই দুঃখ জনক! 

উপজেেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মশিউর রহমান বলেন, হাসপাতালে জনৈক ফারুক ও তার স্ত্রী ১২ থেকে ১৩ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন। তাদের সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখন তারা সুস্থ। তাদের আজকে রিলিজ দিতে চেয়েছি, কিন্তু তারা রিলিজ নিতে চান না। এখন রোগী সুস্থ কেন রিলিজ নিবে না? এই বিষয় নিয়ে তাদের সাথে আমার বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে আমি জরুরি বিভাগে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে কর্তব্যরত ছিলাম। এসময় বিএনপি'র সেচ্ছাসেবক দলের নেতা মামুনসহ ১০ থেকে ১২ জন এসে আমাকে ঘর থেকে বাহির হতে বলে এবং গালাগালি করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে একজন আচমকা আমার মুখের ওপর ঘুষি মারে এবং আমার গলা চিপে ধরে বাহিরে নিয়ে এসে আমার মোবাইল ফোনটিও তারা কেড়ে নেয়। পর আমার হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীরা আমাকে তাদের নিকট থেকে উদ্ধার করতে গেলে তারাও আহত হয়। 

অভিযুক্ত হাকিমপুর পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টা জানতে চাইলে ডাক্তার আমাকে ধাক্কা দেয়। তখন এই ঘটনা ঘটে। তবে আমি তাকে মারিনি, আমার সাথের লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। উনার মোবাইল ফোন তখনি ফেরত দেওয়া হয়েছে। 

হাকিমপুর উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, হাসপাতালের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। খবর পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অভিযুক্ত মামুনকে সেখানে দেখতে পেয়ে ডাক্তারদের সামনেই মারধর করেছি এবং ডাক্তারের হাত ধরে মাফ নিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমি মনে করি বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে। 

হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দিনে দুপুরে কর্তব্যরত চিকিৎসক মশিউর রহমানকে মারধর সহ লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এটা আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য লজ্জাজনক। এভাবে হাসপাতালে এসে একজন চিকিৎসককে কোন ভাবেই মারধর করতে পারেন না তিনি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি। ওনারা অবশ্যই এবিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। আমরা হাকিমপুর থানাকে অবগত করেছিলাম, পুলিশ হাসপাতালে এসে সব বিষয় জেনে গেছে।

হাকিমপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক ওসি (তদন্ত) এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাসপাতালের ঘটনাটি মুঠোফোনে অবগত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পুলিশ টিম পাঠিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে আমি নিজেই ঘটনা স্থলে যায়। লিখিত অভিযোগ পেলে তার ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আজ শুক্রবার পর্যন্ত ডাক্তার বা হাসপাতাল কতৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দাখিল করে নাই। বরং তারা বলেছেন আমরা মাফ করে দিয়েছি। 

এবিষয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ড. মোঃ আসিফ ফেরদৌস বলেন, হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মশিউর রহমানের উপর হামলার বিষয়টি জেনেছি। তাদের যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে আমাদের নিকট অভিযোগ করতো। সেটি না করে একজন কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধর করলো। তারা একজন চিকিৎসকের গায়ে হাত তুলতে পারে না। বিষয়টি আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো।

উল্লেখঃ ঘটনার দিন শেষে রাতেই জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত যুগ্ম আহবায়ক রাজু মুন্সী স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে হাকিমপুর হিলি পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন এর প্রাথমিক সদস্য পদ সহ সকল পদ স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি জেলা আহবায়ক ও সদস্য সচিব অনুমোদন করেছেন মর্মে পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।