নবাবগঞ্জ

নবাবগঞ্জে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এর মাধ্যমে ৩ হাজার পরিবার এখন স্বাবলম্বী

প্রিন্ট
নবাবগঞ্জে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এর মাধ্যমে ৩ হাজার পরিবার এখন স্বাবলম্বী

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০২৫, সকাল ১১:৪২ আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, সকাল ১১:৪৫

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা ও আর্থিক সচ্ছলতার লক্ষণীয় অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ধারাবাহিক কার্যক্রমের ফলে এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ, নবাবগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ৩১৫টি সাওতাল ও তুরী পরিবারসহ প্রায় ৩ হাজার প্রান্তিক পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল লাইভলিহুডস ডেভেলপমেন্ট অব দ্য এক্সট্রিম পুওর কমিউনিটিজ (সাপোর্ট)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।।

প্রকল্পটির আওতায় আয়বৃদ্ধিম‚লক প্রশিক্ষণ, নগদ সহায়তা, প্রযুক্তিগত সহায়তা, নারীভিত্তিক স্বনির্ভর দল গঠন, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও নেতৃত্ব উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১২১টি নারীগ্রæপ গঠিত হয়েছে, যারা সঞ্চয় করছে, সুদবিহীন ঋণ গ্রহণ করছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে খাদ্য ব্যাংক পরিচালনা করছে।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক কাজল কুমার বসাক জানান, এই প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের নয়, বরং প্রান্তিক জনগণের অধিকার সচেতনতা ও সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রেও ভ‚মিকা রাখছে।

এছাড়া, অংশগ্রহণকারীদের জন্য গবাদিপশু পালন, হাঁস-মুরগি ও সবজি চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ইসলামিক রিলিফের অ্যাডভোকেসি ও যোগাযোগ সমন্বয়কারী সফিউল আযম বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে ইসলামিক রিলিফ। সকল শ্রেণির মানুষের মর্যাদা ও উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

স্থানীয় কিছু উপকারভোগী জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ ও সহায়তার ফলে তারা এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। যেমন, রঘুনাথপুর গ্রামের সাওতাল সনমনি কিসকু বলেন, এককালীন আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ পেয়ে তিনি গবাদিপশু পালন শুরু করেছেন এবং বর্তমানে সংসার চালাতে সক্ষম হয়েছেন। একই গ্রামের আরেক নারী, আরতি কিসকু জানান, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে তিনি এখন একটি মুদি দোকান পরিচালনা করছেন এবং স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগেও যুক্ত হচ্ছেন।

দলনেত্রী বিলকিস খাতুন বলেন, নেতৃত্ব ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে। আগে যারা বিভিন্ন সেবার সুযোগ সম্পর্কে জানতেন না, এখন তারা সেবাগুলো গ্রহণ করতে পারছেন এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় দাবি উত্থাপন করতে পারছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রেও প্রকল্পটির কিছু উদ্যোগ রয়েছে। রঘুনাথপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরিন নাহার নিপা জানান, বিদ্যালয়ে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের ফলে কিশোরীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও অধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণের ফলে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিংয়ের বিষয়ে তারা সচেতন হয়েছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিনোদনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রান্তিক জনগণের উন্নয়নে ইসলামিক রিলিফের কার্যক্রম একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এই মডেল অন্য সংস্থাগুলোর জন্য অনুসরণযোগ্য।

প্রকল্পটির আওতায় জলবায়ু সহনশীল কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রতিবন্ধীদের সহায়তা, কিশোরীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্কুলভিত্তিক স্বাস্থ্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে নবাবগঞ্জের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিভিন্ন মাত্রায় উপকৃত হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই পরিবর্তন টেকসই রাখতে সরকারি ও স্থানীয় অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।