বুধবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত সময়সূচী বেধে দিয়ে এবং আল্টিমেটাম দিয়ে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহার ও শিক্ষাবোর্ডের তালা খুলে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা ঘোষণা দিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নেয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা ও পালন শুরু করা হবে।
আজ মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৬ টার দিকে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থী বাদশা আল কাওসার এই ঘোষণা দেয়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর ৯টি দাবি পেশ করেছে।
এর আগে বিকেল ৩ টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সামনে এসে জড়ো হয়। পরে তারা শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা মেরে দেয়। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। পরে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের সামনে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে করে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা অবরোধ করে। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যায়। এসময় তারা সেখানে বিক্ষোভ করে।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা: তৌহিদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু এরপরও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির বিষয়ে অনড় থাকেন। এই ঘটনায় যে কোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে শিক্ষা বোর্ড এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা সম্বলিত একটি দাবি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে পেশ করে। পরে পৌনে ৬ টার দিকে শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নিতে বুধবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত সময় বেধে দেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা দেয়া হবে জানিয়ে কর্মসূচী স্থগিত করেন। পরে তারা শিক্ষাবোর্ডের তালা খুলে দেন এবং দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহার করে যান চলাচল করতে দেন।
শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি জানিয়েছেন সেগুলো হলো- শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ, দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রদান (অফলাইন ও অনলাইনে তথ্য প্রদান), ২৯ তারিখে মাইলস্টন কলেজের ঘটনায় নিহত ও আহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সকল বোর্ডের প্রশ্নপত্রে সামঞ্জস্য বিধান করা, মার্জিনাল মার্ক রাখা চলবে না (যেমন ১ বা ২ মার্কের জন্য গ্রেড পরিবর্তন অথবা ১ বা ২ মার্কের জন্য অকৃতকার্য করানো যাবে না), এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫ এর ১, ২ ও ৩ বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার ব্যবস্থা, সিকিউ এবং এমসিকিউ মিলে একত্রে পাশ প্রদান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর সেনাবাহিনী সদস্য হাত তোলার জন্য জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে এবং বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের ক্ষতিপুরন প্রদান, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তর ও অফিসগুলো বিকেন্দ্রীকরণ করা।
আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বাদশা আল কাওসার বলেন, শিক্ষার্থীদের মর্মান্তিক ঘটনা পরেও শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা পরীক্ষা বন্ধ রাখেনি, এটি একটি অমানবিক কার্যক্রম। শিক্ষা উপদেষ্টার পদক্ষেপ ও এই ঘটনার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদেরকে প্রত্যাহার করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন। আমরা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে দাবিগুলো জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। আগামীকাল বুধবার সকাল ১১ টার মধ্যে দাবিগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আমরা আবারও বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করবো।
দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
মতামত