বিরামপুর

বিরামপুরে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে জমজমাট কোরবানীর পশুর হাট

প্রিন্ট
বিরামপুরে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে জমজমাট কোরবানীর পশুর হাট

প্রকাশিত : ২ জুন ২০২৫, বিকাল ৫:৫৬ আপডেট : ২ জুন ২০২৫, সন্ধ্যা ৬:০৭



দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা বিরামপুরে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে জমজমাট হয়ে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট।যতদিন যাচ্ছে কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসায় দিনাজপুরের বিরামপুরে জমতে শুরু করেছে গবাদি পশুর হাটে কেনাবেচা। বিক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়লেও ক্রেতাদের অভিযোগ, গরুর আমদানির মাত্রায় দাম গতবারের চেয়ে বেশি চাওয়া হচ্ছে। অনেক ক্রেতা দাম কমার অপেক্ষায় আছেন বলেও জানিয়েছেন।

তবে বিরামপুরের বেশির ভাগ গবাদি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় গরুর পরিবর্তে এবার দেশীয় জাতের গরু বাজার দখলে রেখেছে। এর মধ্যে বাড়িতে পালন করা নেপালি জাতের শাইওয়াল জাতের গরুও বাজারে উঠেছে। এজন্য এবছর গরুর দাম কমার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বলেও জানান অনেক বিক্রেতা ও ক্রেতা।

উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি আর রোদ উপেক্ষা করেই গরু নিয়ে দাড়িয়ে আছে বিক্রেতারা। আর ক্রেতারা মাথায় ছাতা নিয়ে গরুর দরদাম করছে। প্রতিটি বাজারেই প্রায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার গরু বিক্রির জন্য আনা হয়েছে।

উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের শিবপুর এলাকা থেকে বিরামপুর পশু হাটে গরু নিয়ে এসেছেন ওবায়দুল। তিনি বলেন, ‘আমি নেপালি জাতের শাইওয়াল গরু এনেছি। দাম চাচ্ছি ২ লাখ ৩০ হাজার। কিন্তু প্রায় ১২ মণ ওজনের গরুর দাম করছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। দাম কম বলায় এখনো গরু বিক্রি করতে পারিনি।

কাটলা দক্ষিণ দাউদপুর সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আ: করিম গরু বিক্রি করতে এসে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কম। ৮০ হাজার টাকার গরু ৬৫ হাজার টাকা দাম করছে।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, গতবারের তুলনায় এবার প্রতিটি গরুর দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। ৫৫ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি কোরবানির জন্য ৫৫ হাজার টাকা দামের গরু কিনলাম। তবে গতবার এই গরু ৪৮ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যেই ছিল। এবার একটু দাম বেশি মনে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার বিরামপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪ হাজার ৯৫৪ টি খামারে ৩৪ হাজার ৪১৩ টি গবাদিপশু রয়েছে। বিরামপুর উপজেলার কোরবানির পশুর চাহিদা ২৫ হাজার ২৯৪টি যা পূরণ করার পরেও ৯ হাজার ১১৯টি গবাদি পশু বাহিরে প্রেরণ করা সম্ভব।এবার উপজেলার ৩টি স্থানে বিরামপুর পশু হাট,কেটরা হাট, কাটলা হাটে কোরবানির পশুর হাট বসেছে। প্রতিটি হাটে গবাদি পশুকে দেখভাল করার জন্য ৩টির অধিক মেডিকেল টিম কাজ করছে।

উপজেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট বসে বিরামপুরের পশু হাটে।গত শনিবার প্রায় ৩ হাজারের বেশি গরু এবং প্রায় ২ হাজারের বেশি ছাগল হাটে পরিলক্ষিত হয়।

বিরামপুর হাট ইজারাদার পলাশ বিন আশরাফির সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিরামপুর পশু হাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিগত সরকারের আমলে চাঁদাবাজি,ভ্যাটের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় এগুলো বন্ধ করা হয়েছে। শুধু ক্রেতাদের নিকট হতে গরু প্রতি সরকারি মূল্য ৫৫০ টাকা এবং ছাগল প্রতি ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত গরু ব্যবসায়ী ও পাইকারদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গরু পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ২ টি মেডিকেল টিমের পাশাপাশি ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা রয়েছে।

বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন এবং তার বাইরেও গবাদি পশুর হাট দেখভাল করার জন্য আমাদের ভেটেরিনারি টিম কাজ করছেন। আমরা বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখেছি, এবার ভারতীয় গরু কোন হাটেই চোখে পড়েনি।এ জন্য দেশীয় গরুর খামারি ও মালিকেরা এবার ভালো দাম পাবে বলেও জানান তিনি।

বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত তাসনীম আওন বলেন, সীমান্তবর্তী উপজেলা হিসেবে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু কোনভাবে প্রবেশ যেন না করে এবং পুশ ইন এর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে বিজিবি সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।এছাড়াও উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।এপর্যন্ত কোথাও চাঁদাবাজীসহ কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।