শিক্ষাঙ্গন

৪১৭ নং রুম: স্বপ্নের ল্যাবরেটরি থেকে বাস্তবতার প্রতীক্ষা

প্রিন্ট
৪১৭ নং রুম: স্বপ্নের ল্যাবরেটরি থেকে বাস্তবতার প্রতীক্ষা

প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২৫, সন্ধ্যা ৬:২৪

শিক্ষা শুধু শ্রেণিকক্ষ কিংবা পাঠ্যসূচিতে সীমাবদ্ধ নয়,তার প্রকৃত গভীরতা ও সার্থকতা প্রকাশ পায় গবেষণাগারে, হাতে-কলমে শেখার নিঃশব্দ চর্চায়। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) এর ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের ড.কুদরত-এ-খুদা ভবনের ৪১৭ নম্বর রুম ছিল এমনই এক স্বপ্নের প্রতীক, যা শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চেষ্টার প্রকাশ ছিল।সম্প্রতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. এন. এইচ. এম. রুবেল মজুমদার আজ(১৭ মে ২০২৫) তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে এক আবেগঘন স্ট্যাটাসে তুলে ধরেন ৪১৭ নম্বর রুমকে ঘিরে গড়ে ওঠা একটি স্বপ্নের ল্যাবরেটরির কথা। যা এখন নানা প্রশাসনিক ও স্থানগত কারণে বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।

স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন: শিক্ষা কখনো কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকে না—তার প্রকৃত পরিপূর্ণতা আসে গবেষণাগারের নিঃশব্দ একাগ্রতায়, হাতে-কলমে শেখার সরল অথচ গভীর চর্চায়। বিশেষ করে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান—a subject that directly connects science with humanity—যেখানে জ্ঞানের প্রতিটি সেল শিক্ষার্থীর হাত দিয়ে জীবনের প্রয়োজনে রূপ নেয়।

এই চেতনাকে ধারণ করেই ফুড সায়েন্স এন্ড নিউট্রিশন বিভাগ ৪১৭ নং রুমকে ঘিরে এক টুকরো স্বপ্ন বুনেছিল—একটি আধুনিক, মানবিক ও কার্যকর ল্যাবরেটরি, যেখানে শুধু পরীক্ষা হবে না, হবে ভবিষ্যৎ নির্মাণ। ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, এই স্বপ্নের প্রথম রেখাচিত্র তৈরি হয়েছিল স্থাপত্য বিভাগের এক ছাত্র SP Sakib এর সৃষ্টিশীল মেধায়; এটি ছিল কেবল একটি ডিজাইন নয়—একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা, এক নিঃশব্দ কিন্তু উচ্চারিত আশা।

এই উদ্যোগে ফুটে উঠেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু করে যাওয়ার দায়বদ্ধতা। এই ল্যাবের কাঠামোতে ছিল আধুনিক সরঞ্জামের পাশাপাশি একটুকরো মনোযোগ, স্নেহ, ও দায়িত্ববোধ—যা আমাদের শিক্ষার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতাকে নিয়ে যেত এক অনন্য উচ্চতায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি বৃহৎ পরিসরে উন্নত কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়, তবে সেটি অবশ্যই সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—খাদ্যবিজ্ঞানের তিনটি বিভাগের মধ্যে দুটি যদি একই তলায় থেকে গবেষণা করে, আর ফুড সায়েন্স এন্ড নিউট্রিশন থেকে যায় বিচ্ছিন্ন, তবে কি তা শিক্ষার্থীদের মাঝে এক অদৃশ্য বৈষম্য সৃষ্টি করবে না?

একই অনুষদের অধীনে থাকা বিভাগগুলোর একত্রে অবস্থান কেবল স্থানিক নৈকট্য নয়, বরং অন্তর্দৃষ্টি, রিসোর্স শেয়ারিং, আন্তঃবিভাগীয় উদ্ভাবনের এক অনন্য সম্ভাবনা। এই অবস্থান যদি হারিয়ে যায়, তাহলে শুধু একটি রুম হারাবে না—হারাবে একটি অনুভব, একটি ঐক্যবদ্ধতা, একটি স্বপ্ন।

৪১৭ নং রুম ছিল আমাদের সেই কল্পনার পরিসর—যেখানে শিক্ষার্থীরা ভাববে, সৃষ্টি করবে, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির মতো জাতীয় অগ্রাধিকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখবে। আজ আমরা সেই স্বপ্নের দরজায় কড়া নাড়ছি—মানবিকতা, যুক্তিবোধ ও স্বচ্ছতার আবেদন জানিয়ে।

এটি কোনো চাওয়া নয়—এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রাপ্য অধিকার। এই ল্যাব শুধু একটি ঘর নয়—এটি ভালোবাসার পরিমণ্ডল, আত্মমর্যাদার প্রতিচ্ছবি, আর জাতি গঠনের ক্ষুদ্র অথচ শক্তিশালী একটি ভিত্তি। আমরা চাই, এই স্বপ্ন যেন আলোর মুখ দেখে। এটি আমাদের লড়াই নয়—এটি আমাদের ভালোবাসা।

উল্লেখ্য, ড. কুদরত-এ-খুদা ভবনের ৪১৭ নম্বর রুমটি গত ১৫ মে ২০২৫ তারিখে স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের এক আন্দোলনের মুখে চারতলার অন্যান্য আরও কয়েকটি রুমসহ তাদের দিয়ে দেওয়া হয়।