খানসামা

নকশা ভুলে আটকে ১০ গ্রামের জীবন, আট বছর ধরে দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

প্রিন্ট
নকশা ভুলে আটকে ১০ গ্রামের জীবন, আট বছর ধরে দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি : “মাঝনদীতে পড়ে আছে সেতু, দুই পারে বিদ্যমান সড়কও তবু মানুষ পার হচ্ছে বাঁশের সাঁকো ধরে। এমন উন্নয়নই প্রশ্ন তোলে পরিকল্পনার দায় নিয়ে।”।


প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, দুপুর ২:২৩

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের বাসুলী গ্রামে কালামাটিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতু আজও সাধারণ মানুষের কাজে আসছে না। কারণ, নদীর প্রকৃত প্রস্থ বিবেচনা না করে সেতুটি ছোট করে নির্মাণ করায় বিদ্যমান সড়কের সঙ্গে কোনো সংযোগই তৈরি হয়নি। ফলে গত আট বছর ধরে এই সেতু পড়ে আছে ব্যবহারের অযোগ্য অবস্থায়।

সরকারি অর্থায়নে ২০১৪ সালের ১০ মে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ৭১৮ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় সেতুটি। উদ্বোধন করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। স্থানীয়রা জানান, নির্মাণকালেই বোঝা যায়—সেতু নদী পুরোপুরি অতিক্রম করতে পারছে না।

২০১৭ সালের বন্যায় এক পাশের মাটি ধসে গেলে সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আর কোনো সংস্কার হয়নি।

দিন কাটে সাঁকো ধরে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী সাঁকো এখন মানুষের একমাত্র ভরসা। রোগী, শিক্ষার্থী, কৃষক-সবাই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন নদী পার হচ্ছেন।

নদীর পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি বড় বাজার, একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। অসুস্থ রোগীদের সাঁকো পার করিয়ে ক্লিনিকে নেওয়া হয় মানবিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাসিন্দা শহিদুল হক বলেন, “আমাদের ফসল বাজারে নিতে হলে সাঁকো পার হতে হয়। ট্রলি বা ভ্যান যেতে পারে না। এটা উন্নয়নের ব্যর্থতা।”

ছাত্রী মুক্তা রায় বলেন, “সেতু আছে, কিন্তু ব্যবহার করতে পারি না। বর্ষায় সাঁকো ভয়ংকর হয়ে ওঠে।”

অলোকঝাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, "এটা এলাকার দীর্ঘদিনের দাবি। আমরা বারবার উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে জানিয়েছি। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করছি।"

এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, "টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্নের পথে। প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হলেই উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।"

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া  গতবছরের ২৪ ডিসেম্বর পরিদর্শনে আসেন, কিন্তু তাতেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, “উন্নয়ন কাজ এখনও শুরু হয়নি, কারণ টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করছে। টেন্ডার সম্পন্ন হলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, "সরকার জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সবসময় আন্তরিক এবং এলাকাবাসীর ভোগান্তি কমাতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তবে টেন্ডার প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন, ওয়ার্ক অর্ডারসহ অন্যান্য বিষয় মন্ত্রণালয় থেকে সম্পন্ন হবে। আমাদের উপজেলা পর্যায় থেকে যা করা সম্ভব, সবকিছু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।"

সরকারি অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু এখন এক নির্মম ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত। জনগণের চলাচলের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি ভিত্তিতে সংযোগ সড়ক ও সেতু সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সচেতন সমাজ।